×
তাওহীদ হচ্ছে দীনের মূল বিষয়। আর হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা। হাজী সাহেব এ তাওহীদেরই ঘোষণা দিয়ে থাকে তার তালবিয়াতে, তার আরাফার দো‘আতে, তার তাওয়াফের সময়, কঙ্কর নিক্ষেপের সময়, যবেহ এর সময়। সুতরাং এ বিষয়টি নিয়েই এ প্রবন্ধটি লিখা হয়েছে।

    তাওহীদ: হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য

    [বাংলা– Bengali – بنغالي ]

    সংকলন: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

    সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    2014-1435

    ﴿ التوحيد : أهم مقاصد الحج﴾

    « باللغة البنغالية »

    تأليف: ذاكرالله أبو الخير

    مراجعة:د/ أبو بكر محمد زكريا

    2014 - 1435

    হজের উদ্দেশ্য

    হজ ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। আল্লাহ তা‘আলা যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উপর হজকে ফরয করেছেন। হজ শুধু আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। হজের অবশ্যই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে, যা আমরা অনেকেই বুঝতে চেষ্টা করি না। হজের মহান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল, হজের প্রতিটি কথা, কাজে ও বিশ্বাসে আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহীদের ঘোষণা দেওয়া এবং আল্লাহ রাসূলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। হজের প্রতিটি আমলে আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই। নিম্নে আমরা বিষয়টি কুরআন ও হাদিসের আলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

    এক- একজন হাজী যখন ইহরামের কাপড় পরিধান করেন, তখন প্রথমেই সে বড় আওয়াজে তাওহীদের ঘোষণা দেয়। তালবীয়া পাঠ করে, এ বলে শ্লোগান দেয়, আল্লাহ একক, তার কোনো শরীক নেই, যাবতীয় প্রশংসা, নেয়ামত ও আধিপত্য কেবল তার। ইহরাম উভয় অবস্থায় সে বার বার এ কথাগুলো উচ্চারণ করতে থাকে-

    لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمة لك والملك، لا شريك لك،

    “আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই প্রশংসা ও নেয়ামত তোমার এবং রাজত্বও তোমার। তোমার কোনো শরিক নেই”[1]

    দুই- হজের গুরুত্বপূর্ণ রুকন আরাফার ময়দানে অবস্থানকালে যখন সমস্ত হাজীরা এ বিশাল সমাবেশ ও মহা মিলন মেলায় একত্র হয়। এখানেও তারা আল্লাহর তাওহীদ ও একত্ববাদের ঘোষণা করতে থাকে। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তার, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। এ দো‘আটিতেও রয়েছে তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিধ্বনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «خير الدعاء دعاء عرفة، وخير ما قلت أنا والنبيون من قبلي: لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير» رواه الترمذي.

    “উত্তম দো‘আ হল আরাফার দিনের দো‘আ। আর উত্তম কথা হল, যা আমি এবং আমার পূর্বের নবীগণ বলেছেন, “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তার, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান”[2]

    তিন- তাওহীদের প্রাণ কেন্দ্র আল্লাহর ঘর-বাইতুল্লাহ-কে কেন্দ্র-বিন্দু বানিয়ে হাজীগণ তাওয়াফ করেন। এ তাওয়াফ করা নিছক কোনো চক্বর লাগানো নয়। এটি এ কথারই বহিঃপ্রকাশ যে, একজন মুমিনের সমগ্র জীবনের কেন্দ্র-বিন্দুই যেন হয়, মহান আল্লাহ তা‘আলার আদেশ নিষেধকে কেন্দ্রিক। আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বিত্তের মাঝেই আবর্তিত হোক তার জীবনের সবকিছু। বাইতুল্লাহর চার পাশে ঘোরা আল্লাহর মহান নির্দেশ ও নিদর্শনের চারপাশে ঘোরা। তাওহীদের আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের চার পাশে ঘোরা। আল্লাহর ঘর ছাড়া অন্য কোনো স্থান, যেমন- কবর, মাজার ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করা সম্পূর্ণ বাতিল এবং তা হবে আল্লাহর ইবাদতে শির্ক করা। সুতরাং, তাওয়াফ একমাত্র আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করেই হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿...وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩ ﴾ [الحج : ٢٩]

    ‘...এবং প্রাচীন ঘরের যেন তাওয়াফ করে’। [সূরা হজ, আয়াত: ২৯]

    চার- হাজীদের জন্য হাজরে আসওয়াদকে চুমো দেওয়া ও রুকনে ইয়ামনিকে স্পর্শ করা সূন্নাত। কারণ, উভয়টি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন। তবে এ সময়ও ‘আল্লাহু আকবর’ বলে আল্লাহর বড়ত্ব ও তাওহীদের ঘোষণাই উচ্চারণ করতে হয়। অন্তরে এ বিশ্বাস রাখতে হয়- এ দুটি বস্তুর কারো কোনো উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই। উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা আল্লাহর এবং বড়ত্ব কেবলই আল্লাহর। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন-স্পর্শ মুমিনের হৃদয়ে আল্লাহর নবীর আনুগত্যের চেতনাকে জাগ্রত করে। কারণ, নিছক পাথরকে চুম্বন করার রহস্য কি তা আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির আওতার বাইরে। তবুও আমাদের চুম্বন করতে হয়। কারণ, চুম্বন করা আল্লাহর রাসূলের আনুগত্যে নিজেকে উৎসর্গ করার একটি আলামত। এ কারণেই ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

    «وَاللهِ، إِنِّي لَأُقَبِّلُكَ، وَإِنِّي أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ، وَأَنَّكَ لَا تَضُرُّ وَلَا تَنْفَعُ، وَلَوْلَا أَنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبَّلَكَ مَا قَبَّلْتُكَ»

    “আল্লাহর শপথ! আমি জানি, তুমি একটি পাথর, উপকার বা ক্ষতি কোনটিই করতে পার না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চুমো দিতে না দেখলে তোমাকে চুমো দিতাম না”[3]

    এখানে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাওয়াফের সময় একমাত্র রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদ ছাড়া বাইতুল্লাহর কোনো কিছুকেই বরকত লাভ বা সম্মানার্থে স্পর্শ করা জায়েয নেই। কারণ, রাসূর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেন নি।

    পাঁচ- তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পাশে দুই রাকাত নামাজ পড়া সূন্নাত। তাতেও রয়েছে তাওহীদের প্রতিফলন। দুই রাকাত নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা এখলাস পড়াই সূন্নাত। প্রথম সূরাতে শির্ক হতে মুক্ত হওয়া এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ঘোষণা রয়েছে এবং দ্বিতীয় সূরায় আল্লাহর পরিচয়, গুণগান ও মহত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।

    ছয়- সাফা ও মারওয়া সায়ী করাতেও রয়েছে তাওহীদ তথা একত্তবাদের বহিঃপ্রকাশ। সাফা ও মারওয়ায় তাওহীদ ভিত্তিক দো‘আ তাওহীদের তথা একত্ববাদের সাথে হজের অচ্ছেদ্য সম্পর্ককে নির্দেশ করে। জাবের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফায় আরোহণ করলেন, কাবা দৃষ্টিগ্রাহ্য হল, তিনি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্বের কথা বললেন, তার তাওহীদ ও বড়ত্বের ঘোষণা দিলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই। প্রশংসাও তার। তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তিনি তার অঙ্গীকার পূরণ করেছেন, তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন ও শত্রুদলকে একাই পরাভূত করেছেন। মারওয়া পাহাড়ে গিয়েও তিনি অনুরূপ করলেন।[4]

    সাত- মিনা প্রান্তরে অবস্থান কালে গুরুত্বপূর্ণ আমল জামরায় পাথর মারা। প্রথম দিন-দশ তারিখে- বড় জামরায় এবং পরবর্তী তিন দিন-এগারো, বারো ও তেরো- ছোট, বড় ও মাঝারি পরপর তিনটি জামরায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করা। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে আল্লাহর বড়ত্ব ও তাওহীদের ঘোষণা করা। আল্লাহ তুমি মহান, তোমার আদেশ শিরোধার্য, তোমার রাসূলের আদর্শই অনুকরণীয়। আমি বুঝি বা না বুঝি তোমার আদেশ পালন করা ও তোমার রাসূলের সূন্নাতের অনুকরণ করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আমি শুধু পাথরকে নিক্ষেপ করছি না, আমি আমার মনের যত শয়তানী, কু-প্রবৃত্তি ও খারাবী রয়েছে সবই নিক্ষেপ করছি।

    আট- হাজিদের জন্য কুরবানী করা হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কুরবানির অর্থ, ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হওয়া। কুরবানি আল্লাহর আদেশের সামনে নিজেকে পেশ করার একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্ত। শুধু পশু কুরবানি নয় পশুত্বকেও কুরবানি করে মহান আল্লাহকে খুশি করাই এ কুরবানির অন্যতম লক্ষ্য। কুরবানির মুহূর্তে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হয় এবং বলতে হয় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’। এ দ্বারা জানিয়ে দিতে হয় যে, আমি এক আল্লাহর নামেই কুরবানি করছি, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, আনুগত্য শুধুই তার। কুরবানি বা জবেহ তার নামেই করতে হয়। তার নাম ছাড়া কারো নামে বা কাউকে উদ্দেশ্য করে কুরবানি করা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَلَهُۥٓ أَسۡلِمُواْۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُخۡبِتِينَ ٣٤ ﴾ [الحج : ٣٤]

    “প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও”[5]

    আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

    ﴿وَٱلۡبُدۡنَ جَعَلۡنَٰهَا لَكُم مِّن شَعَٰٓئِرِ ٱللَّهِ لَكُمۡ فِيهَا خَيۡرٞۖ فَٱذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهَا صَوَآفَّۖ فَإِذَا وَجَبَتۡ جُنُوبُهَا فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡقَانِعَ وَٱلۡمُعۡتَرَّۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرۡنَٰهَا لَكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٣٦ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ ﴾ [الحج : ٣٦، ٣٧]

    “আর কুরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলি কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোস্ত ও রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়েত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্ম শীলদেরকে সুসংবাদ দাও”[6]

    এতে স্পষ্ট হয় যে, জবেহ করা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত। গাইরুল্লাহর জন্য জবেহ করা যাবে না। কোনো মাজার, ওলী, কিংবা তথাকথিত গাউস, কুতুব বা অন্য কোনো মাখলুকের নামে ও তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জবেহ করা যাবে না। গাইরুল্লাহর নামে জবেহ করা শির্কে আকবর যা ক্ষমা করা হয় না।

    অনুরূপভাবে মিনায় অবস্থান কালে মাথার চুল কাটা বা মুণ্ডন করা আল্লাহর ইবাদত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দো‘আ করেন। সুতরাং কারও সম্মানার্থে বা কাউকে খুশি করার উদ্দেশ্যে মাথার চুল ছোট করা বা মুণ্ডন করা অবশ্যই শির্ক যা ক্ষমা করা হবে না।

    নয়- আল্লাহ তা‘আলার জন্য হজ পালন অবস্থায় যেমনিভাবে আল্লাহর বড়ত্ব ও তাওহীদের ঘোষণা দিতে হয়, হজ শেষ করার পরও আল্লাহর বড়ত্ব ও তাওহীদের ঘোষণা দিতে হয়। আল্লাহ তা‘আলা হজের আগে ও পরে আল্লাহর জিকির ছাড়া আর কারও জিকির চাই জীবিত হোক বা মৃত করতে নিষেধ করেছেন। এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা বংশীয় ও গোত্রীয় মর্যাদা নিয়ে অহংকার ও গর্ব কর নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

    ﴿ فَإِذَا قَضَيۡتُم مَّنَٰسِكَكُمۡ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَذِكۡرِكُمۡ ءَابَآءَكُمۡ أَوۡ أَشَدَّ ذِكۡرٗاۗ فَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا وَمَا لَهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنۡ خَلَٰقٖ ٢٠٠ وَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَآ ءَاتِنَا فِي ٱلدُّنۡيَا حَسَنَةٗ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ حَسَنَةٗ وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ٢٠١ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ نَصِيبٞ مِّمَّا كَسَبُواْۚ وَٱللَّهُ سَرِيعُ ٱلۡحِسَابِ ٢٠٢ ۞وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوۡمَيۡنِ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَآ إِثۡمَ عَلَيۡهِۖ لِمَنِ ٱتَّقَىٰۗ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ إِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ ٢٠٣ ﴾ [البقرة: ٢٠٠، ٢٠٤]

    “তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজের কাজসমূহ শেষ করবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে, এমনকি তার চেয়ে অধিক স্মরণ। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। বস্তুত আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশ নেই। আর তাদের মধ্যে এমনও আছে, যারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। তারা যা অর্জন করেছে তার হিস্যা তাদের রয়েছে। আর আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত। আর আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনসমূহে। অতঃপর যে তাড়াহুড়া করে দু’দিনে চলে আসবে। তার কোনো পাপ নেই। আর যে বিলম্ব করবে, তারও কোনো অপরাধ নেই। (এ বিধান) তার জন্য, যে তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমাদেরকে তাঁরই কাছে সমবেত করা হবে”[7]

    -------------

    [1] বুখারি, হাদিস: ৫৪৬০

    [2] তিরমিযি, হাদিস নং ৩৫৮৫। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

    [3] বুখারি, হাদিস:১৫৯৭; মুসলিম, হাদিস: ১২৭০

    [4] আবু দাউদ, হাদিস: ১/৩৫১; মুসলিম হাদিসে জাবের, হাদিস: ২১৩৭

    [5] সূরা হজ, আয়াত: ৩৪

    [6] সূরা হজ, আয়াত: ৩৬,৩৭

    [7] সূরা বাকারা, আয়াত: ২০০-২০৩