এ আইটেমটি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত
- português - Portuguese
- اردو - Urdu
- Ўзбек - Uzbek
- Deutsch - German
- Shqip - Albanian
- español - Spanish
- bosanski - Bosnian
- ไทย - Thai
- svenska - Swedish
- Tiếng Việt - Vietnamese
- മലയാളം - Malayalam
- magyar - Hungarian
- हिन्दी - Hindi
- فارسی - Persian
- Türkçe - Turkish
- 中文 - Chinese
- Bahasa Indonesia - Indonesian
- Wikang Tagalog - Tagalog
- English - English
- አማርኛ - Amharic
- Русский - Russian
- العربية - Arabic
- অসমীয়া - Assamese
Full Description
কে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন? আমাকে কে সৃষ্টি করেছেন? এবং কেন?
আমি কি সঠিক পথে আছি?
আসমান-জমিন এবং এর মধ্যে যে বড় বড় মাখলুক আছে, যেগুলোকে পরিবেষ্টন ও গণনা করা যায় না, এগুলোকে কে সৃষ্টি করেছেন?
আসমান ও জমিনের এ সূক্ষ্ম-সুদৃঢ় ব্যবস্থা কে তৈরী করেছেন?
কে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে দৃষ্টি, শ্রবণ ও জ্ঞানশক্তি প্রদান করেছেন এবং তাকে জ্ঞান লাভ করা ও বাস্তবতা বোঝার উপযুক্ত করেছেন?
তোমার শরীরের বিভিন্ন অংশে এই নিখুঁত কারুকার্য কে সৃজন করেছেন এবং কে তোমাকে সুন্দর অবয়ব দান করেছেন?
জীবজগতের বিভিন্ন পার্থক্য ও বৈচিত্রের দিকে খেয়াল কর, কে তাদেরকে এ সীমাহীন সৌন্দর্য সহকারে সৃষ্টি করেছেন?
বছরের পর বছর ধরে তার সুনিপুণ সূক্ষ্ম সূত্রসমূহে এ মহাবিশ্বকে তিনি কীভাবে সুশৃঙ্খল ও স্থির রেখেছেন?
কে সেই সত্তা, যিনি এমন ব্যবস্থাসমূহ তৈরি করেছেন, যা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে (জীবন, মৃত্যু, পুনর্জীবন , রাত, দিন, ঋতুর পরিবর্তন ইত্যাদি)?
এ বিশ্ব কি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছে? নাকি এটি কোনো অস্তিত্বহীন বস্তু থেকে এসেছে? নাকি এটি হঠাৎ করে এমনিতেই সৃষ্টি হয়ে গেছে? আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ (٣٥) أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ: "তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?"أَمْ خَلَقُوا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بَلْ لَا يُوقِنُونَ﴾ أَمْ خَلَقُوا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بَلْ لَا يُوقِنُونَ: "নাকি তারা আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না।"[সূরা আত-তূর, আয়াত: ৩৫-৩৬]।
সুতরাং আমরা যদি নিজেদেরকে সৃষ্টি না করে থাকি, এবং আমাদের পক্ষে এমনিতেই ঘটনাচক্রে অথবা অনস্তিত্বশীল বস্তু থেকে আসা অসম্ভব হয়, তাহলে অনস্বীকার্য সত্য হচ্ছে, এ মহাবিশ্বের অবশ্যই একজন মহান এবং সক্ষম সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। কারণ, এ মহাবিশ্ব নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করা অথবা অনস্তিত্বশীল বস্তু থেকে অস্তিত্বে আসা অথবা এমনিতেই ঘটনাচক্রে সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব!
কেন একজন ব্যক্তি এমন জিনিসের অস্তিত্বে বিশ্বাস করবে যা সে দেখতে পায় না, যেমন উপলব্ধি, বুদ্ধি, আত্মা, আবেগ এবং ভালোবাসা? সে এগুলোর প্রভাব দেখে, এটাই কী কারণ নয়? তাহলে কীভাবে একজন ব্যক্তি এই মহাবিশ্বের একজন মহান স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারে, যখন তাঁর সৃষ্ট জীব বা মাখলুক, তাঁর কাজ এবং তাঁর রহমতের প্রভাব সে প্রত্যক্ষ করে?!
কেউ এ বাড়িটি তৈরি না করলেও বাড়িটি এমনিতেই অস্তিত্বে এসেছে অথবা যদি বলা হয় যে, এ বাড়িটিকে কোন অনস্তিত্বে থাকা ব্যক্তি তৈরি করেছে, এ কথা কোন জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করবে না। তাহলে কিছু মানুষ কীভাবে এটা বিশ্বাস করতে পারে যে, এ মহাবিশ্ব একজন সৃষ্টিকর্তা ব্যতীতই অস্তিত্বে এসেছে? একজন বিবেকবান মানুষ কীভাবে এ কথা গ্রহণ করতে পারে যে, সৃষ্টিজগতের এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্রক্রিয়াসমূহ এমনিতেই হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়ে গেছে?
সব কিছুই আমাদের কেবল একটি ফলাফলেই নিয়ে যায়: তা হলো, এই মহাবিশ্বের অবশ্যই একজন মহান-সক্ষম রব আছেন, যিনি এটি পরিচালনা করেন আর তিনিই একক, একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার হকদার। তিনি ব্যতীত অন্য যে কোন বস্তুর ইবাদাত করা হয় তা সম্পূর্ণ বাতিল। (তিনি ব্যতীত) কোন কিছুই ইবাদাতের হকদার হতে পারে না।
রব হচ্ছেন মহান সৃষ্টিকর্তা
তিনিই একজন রব, সৃষ্টিকর্তা ও একক। তিনিই মালিক, পরিচালনাকারী, রিযিকদাতা। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে সৃষ্টি ও অনুগত করেছেন এবং তাকে স্বীয় সৃষ্টির জন্য উপযোগী করেছেন। তিনিই আসমানসমূহ ও তাতে মহান ও বড় বড় যে সব সৃষ্টি রয়েছে তা সবই সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সূর্য, চন্দ্র, রাত ও দিনের সুনির্দিষ্ট ক্রম স্থাপন করেছেন, যা তাঁরই মহত্ত্বের প্রমাণ করে।
তিনিই হচ্ছেন সেই সত্তা, যিনি বায়ুকে আমাদের বশীভূত করেছেন, যা ছাড়া আমরা জীবন ধারণ করতে পারি না। আর তিনিই আমাদের উপরে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আমাদের জন্য সাগর ও নদীকে বশীভূত করেছেন। তিনিই আমাদের খাদ্যদান করেন এবং আমাদেরকে রক্ষা করেন যখন আমরা কোন শক্তি ছাড়াই আমাদের মায়ের গর্ভে ভ্রূণ হিসেবে ছিলাম। তিনিই আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের শিরায় রক্ত সঞ্চালন করেন।
এই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা রবই হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾ ﴿إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ﴾"নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্ যিনি আসমানসমূহ ও জমিন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি 'আরশের উপর উঠেছেন। তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। আর সূর্য,চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি, যা তাঁরই হুকুমের অনুগত, তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন।জেনে রাখ, সৃষ্টি ও আদেশ তাঁরই। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ কত বরকতময়!"[আল-আরাফ, আয়াত: ৫৪]
আমরা মহাবিশ্বের যা কিছু দেখি এবং যা দেখি না আল্লাহই হচ্ছেন সবকিছুর রব, মহা-পরাক্রমশালী এবং সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত সবকিছুই তাঁর সৃষ্টির মধ্য হতে একটি সৃষ্টি মাত্র। একমাত্র তিনিই ইবাদাত পাওয়ার একক হকদার, যার কোন অংশীদার বা সহযোগী নেই। তাঁর আধিপত্য, সৃষ্টি, পরিচালনায় অথবা ইবাদাতে কোনো অংশীদার নেই।
তর্কের খাতিরে যদিও মেনে নেওয়া হয় যে, মহা সম্মানিত আল্লাহর সাথে আরো অনেক ইলাই আছে, তাহলে এ পৃথিবী অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত; কেননা দুইজন ইলাহ একই সময়ে মহাবিশ্বের কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:{لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا} {لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا}"যদি তাতে আল্লাহ ছাড়া অনেক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত।"[আল-আম্বিয়া, আয়াত: ২২]।
মহান সৃষ্টিকর্তা রবের সিফাতসমূহ
রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার রয়েছে অগণিত সুন্দর সুন্দর নাম। তাঁর আরো রয়েছে অসংখ্য সুমহান ও সুউচ্চ গুণাবলী, যেগুলো তাঁর পরিপূর্ণতাকে প্রমাণ করে। তাঁর নামসমূহের মধ্যে রয়েছে: আল-খালিক বা সৃষ্টিকর্তা, আর "আল্লাহ" নামের অর্থ হচ্ছে: এমন সত্তা যিনি শরীকবিহীন ও ইবাদাতের একমাত্র উপযুক্ত। আল-হাই তথা: চিরঞ্জীব, আল-কাইয়ূম বা মহাপরিচালক, আর-রহীম বা পরম দয়াময়, আর-রাযিক্ব বা রিযিকদাতা এবং আল-কারীম বা সম্মানিত।
মহিমান্বিত কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ﴾ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ "আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং জমিনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ত করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও জমিন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।"[সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫]
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেছেন:﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (١) قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ "বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়, (১)اللَّهُ الصَّمَدُ (٢) اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লাহ হচ্ছেন সামাদ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী); (২)لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (٣) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি, (৩)وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ﴾ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।" (৪)[সূরা আল-ইখলাস: ১-৪]।
মা'বূদ (ইবাদাতের উপযুক্ত) রবকে অবশ্যই পূর্ণতার সকল গুণে গুণান্বিত হতে হয়
আল্লাহ তা'আলার সিফাতের মধ্যে রয়েছে: তিনিই হচ্ছেন একমাত্র ইবাদাত ও উপাসনা প্রাপ্তির অধিকারী। তিনি ব্যতীত যা কিছু আছে সব কিছুই মাখলূক তথা: সৃষ্ট সত্তা, জবাবদিহি ও আদেশ শক্তির অধীন।
তাঁর গুণাবলীর মধ্যে আরো রয়েছে: তিনি চিরঞ্জীব (الحي), মহা-পরিচালনাকারী (القيوم)। প্রতিটি জীবের অস্তিত্ব রয়েছে কারণ আল্লাহ তাকে জীবন দিয়েছেন এবং অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। তিনিই সেসব প্রাণীর অস্তিত্ব প্রদান, রিযিকের ব্যবস্থা ও উপযোগিতা নিশ্চিত করেন। সুতরাং রব হচ্ছেন চিরঞ্জীব যিনি কখনও মৃত্যুবরণ করেন না এবং তাঁর অস্তিত্ব বিলীন হওয়া অসম্ভব। তিনি সুমহান পরিচালক, যিনি কখনও ঘুমান না। তন্দ্রা বা নিদ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না।
তাঁর সিফাতের মধ্যে আরো রয়েছে, তিনি সর্বজ্ঞ (العليم), যার কাছে আসমান-যমীনের কোন কিছুই গোপন থাকে না।
তাঁর সিফাতের মধ্যে আরো রয়েছে, তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা-সর্বদ্রষ্টা (السميع البصير), যিনি প্রতিটি বস্তুই শুনতে পান, প্রতিটি সৃষ্টবস্তুকেই দেখতে পান, নফস যেসব বিষয়ে ওয়াসওয়াসা প্রদান করে এবং অন্তর যা কিছু গোপন করে সেগুলোও তিনি জানেন। আসমান-জমিনের মধ্যকার কোন বস্তুই তাঁর সুমহান সত্তার কাছে গোপন থাকে না।
তাঁর সিফাতের মধ্যে আরো রয়েছে, তিনি হচ্ছেন সর্বশক্তিমান (القدير), যাকে কোন কিছুই অক্ষম করতে পারে না আর ইচ্ছাকেও কেউ খণ্ডন করতে পারে না, তিনি যা ইচ্ছা করেন, যা ইচ্ছা তা বাধা দেন, তিনি অগ্রসর করান এবং তিনিই পিছিয়ে দেন আর তাঁর রয়েছে পরিপূর্ণ হিকমাত (প্রজ্ঞা)।
তাঁর সিফাতের মধ্যে আরো রয়েছে, তিনি সৃষ্টিকর্তা (الخالق ), রিযিকদাতা (الرازق), পরিচালনাকারী (المدبر), যিনি সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করে তা পরিচালনা করছেন। সৃষ্টিজগত তাঁর হাতের মুঠোতে এবং তাঁর ক্ষমতার অধীন।
তাঁর গুণাবলীর মধ্যে আরো রয়েছে যে, তিনি নিরুপায় ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন, দুঃখ ভারাক্রান্তকে সাহায্য করেন এবং দুর্দশা দূর করেন। যখনই কোন সৃষ্টি কষ্ট বা অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তখন সে নিরুপায় হয়ে তাঁর দিকেই ফিরে যায়।
ইবাদাত শুধু আল্লাহ তা'আলার জন্যই হয়ে থাকে, শুধু তিনিই এর পরিপূর্ণ উপযুক্ত, আর কেউ নয়। তিনি ব্যতীত আর যারই ইবাদাত করা হোক না কেন, সে ভিত্তিহীন উপাস্য, আর তার অবশ্যই কমতি রয়েছে এবং সে ধ্বংস ও মৃত্যুর সম্মুখীন হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের এমন আকল (বিবেক) দিয়েছেন যা তাঁর মহত্ত্বের উপলব্ধি করতে পারে। এছাড়াও তিনি আমাদের মধ্যে একটি সহজাত স্বভাব (ফিতরাত) স্থাপন করেছেন যা ভালোকে পছন্দ করে এবং মন্দকে ঘৃণা করে। আমরা প্রশান্তি পাই যখন আমরা সমস্ত জগতের রব আল্লাহর দিকে ফিরে যাই। এই সহজাত স্বভাব (ফিতরাত) তাঁর পরিপূর্ণতা ও সেই সুমহান সত্তাকে কোন ধরনের কমতির দ্বারা গুণান্বিত করা যায় না, এটার প্রতি নির্দেশ করে।
একজন পরিপূর্ণ সত্তা ব্যতীত কারো ইবাদাত (উপাসনা) করা কোন বিবেকবান ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়। তাহলে তার মত (সৃষ্ট মানুষ) বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট মাখলুকের ইবাদাত (উপাসনা) কীভাবে করা যায়?
মা'বূদ (ইবাদাত পাওয়ার অধিকারী) সত্তা কখনো মানুষ, মূর্তি, গাছ অথবা কোন প্রাণী হতে পারে না!
রব তাঁর আসমানসমূহের উপরে, তাঁর 'আরশের উপরে উঠেছেন। আর তিনি তাঁর সৃষ্ট বস্তু থেকে আলাদা। তাঁর সত্তার মধ্যে তাঁর সৃষ্টির কিছু নেই এবং তাঁর সত্তার কোন কিছু তাঁর সৃষ্টিতেও নেই। তিনি তাঁর সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে অবতরণ করেন না এবং কারো রূপ গ্রহণ করেন না।
রব আল্লাহ তা'আলার সাথে কোন কিছুর সাদৃশ্য নেই, আর তিনিই সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশ্রোতা। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি তাঁর সৃষ্টিজগৎ থেকে অমুখাপেক্ষী, তিনি ঘুমান না, তিনি খাদ্য গ্রহণও করেন না। তিনি সুমহান, তাঁর কোন স্ত্রী অথবা সন্তান থাকা সম্ভব নয়; কেননা সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্বের গুণাবলি রয়েছে, তাঁকে কখনোই কোন কমতি অথবা প্রয়োজনের দ্বারা বিশেষায়িত করা যায় না।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ (٧٣) يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ: "হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগের সাথে তা শোন: তোমরা আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্র হলেও। এবং মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের কাছ থেকে, এটাও তারা তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও অন্বেষণকৃত কতই না দুর্বল; (৭৩)مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ﴾ مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ: তারা আল্লাহ্ কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি যেমন মর্যাদা দেয়া উচিত ছিল, নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।"[সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৭৩-৭৪]।
কেন এই মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন? এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে কি চান?
এটা কি যৌক্তিক যে আল্লাহ তা'আলা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই এই সমস্ত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন? মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় হওয়া সত্ত্বেও তিনি কি এগুলোকে নিরর্থকভাবে সৃষ্টি করেছেন?
এটা কি যুক্তিযুক্ত যে যিনি আমাদেরকে এত সূক্ষ্মতা এবং পরিপূর্ণতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের সুবিধার জন্য নভোমন্ডল ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে বশীভূত করেছেন, তিনি আমাদের উদ্দেশ্য ছাড়াই সৃষ্টি করবেন? বা আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে এমন গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাদেরকে ছেড়ে দিবেন? যেমন: আমরা এখানে (পৃথিবীতে) কেন এসেছি? মৃত্যুর পর কী হবে? আমাদেরকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?
এটা কি যুক্তিযুক্ত যে অন্যায়কারীর জন্য কোন শাস্তি নেই এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তির জন্য কোন পুরস্কার নেই?
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ﴾ أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ : "তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমরা তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে না?"[আল-মু'মিনুন : ১১৫]।
বরং আল্লাহ রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করার জন্য। তাছাড়া আমরা কীভাবে তাঁর ইবাদাত করব , তাঁর নৈকট্য লাভ করব, তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান, কীভাবে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং আমাদের মৃত্যুর পরে কী পরিণাম হবে ইত্যাদির পথনির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ অসংখ্য রাসূল প্রেরণ করেছেন আমাদেরকে এ সংবাদ দেওয়ার জন্য যে, একমাত্র তিনিই ইবাদাতের উপযুক্ত এবং আমরা কিভাবে তাঁর ইবাদাত করবো, তা জানাতে। এছাড়াও আমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছেন আল্লাহর আদেশসমূহ ও নিষেধসমূহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য, আমাদেরকে উন্নত মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার জন্য, যা গ্রহণে আমাদের জীবন সুন্দর হতে পারে এবং কল্যাণ ও বরকতময় হয়ে ওঠে।
আল্লাহ তা'আলঅ অসংখ্য রাসূল পাঠিয়েছেন, যেমন: নূহ, ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা (আলাইহিমুস সালাম), তাদেরকে তিনি নিদর্শন ও মুজিযাসমূহের মাধ্যমে শক্তিশালী করেছেন, যেগুলো তাদের সত্যতার প্রতি এবং তারা যে আল্লাহ তা'আলার কাছ থেকে প্রেরিত, তার প্রমাণ বহন করে। আর তাদের শেষ রাসূল হচ্ছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
রাসূলগণ আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে সংবাদ দিয়েছেন যে, এ জীবন হচ্ছে পরীক্ষা মাত্র আর প্রকৃত জীবন হবে মৃত্যুর পরে।
যারা শিরকমুক্তভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করেছে এবং সকল রাসূলদের উপরে ঈমান এনেছে, এমন মুমিনদের জন্য রয়েছে জান্নাত। আর যারা আল্লাহর সাথে অন্যান্য ইলাহের উপাসনা করেছে অথবা আল্লাহর রাসূলদের মধ্য হতে কোন একজন রাসূলকে অস্বীকার করেছে, এমন কাফিরদের জন্য আল্লাহ জাহান্নাম (আগুন) প্রস্তুত করে রেখেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي فَمَنِ اتَّقَى وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (٣٥) يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي فَمَنِ اتَّقَى وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ : "হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেন, যারা আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বিবৃত করবেন, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ : আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং তার ব্যাপারে অহংকার করেছে , তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।"[আল-আরাফ, আয়াত : ৩৫-৩৬]
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (٢١) يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ : "হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই রব এর 'ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার।الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (٢٢) الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَكُمْ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَنْدَادًا وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ : যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা ও আসমানকে করেছেন ছাদ এবং আকাশ হতে পানি অবতীর্ণ করে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেছেন। কাজেই তোমরা জেনে শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করিও না।وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ (٢٣) وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ : আর আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মত একটি সূরা নিয়ে আসো এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ (٢٤) فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا وَلَنْ تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ : অতএব যদি তোমরা তা করতে না পারো আর কখনই তা করতে পারবে না, তাহলে তোমরা সে আগুন থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য।وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِزْقًا قَالُوا هَذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِزْقًا قَالُوا هَذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُطَهَّرَةٌ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ : আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদেরকে ফলমূল খেতে দেয়া হবে তখনই তারা বলবে, 'আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা হিসেবে যা দেয়া হত এ তো তাই।' আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করেই এবং সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গিনী। আর তারা সেখানে স্থায়ী হবে।"[সূরা বাকারাহ : ২১-২৫]।
অসংখ্য রাসূল কেন?
আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন জাতির কাছে তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। প্রতিটি জাতির কাছেই আল্লাহ তা'আলা রাসূল পাঠিয়েছেন, যাতে তারা তাদেরকে তাদের রব আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহ্বান করতে পারেন, এবং তাদের কাছে তাঁর আদেশ ও নিষেধ পৌঁছে দিতে পারেন, তাদের সকলেরই দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য ছিল: মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত। যখনই কোন উম্মাত তাদের কাছে আগত রাসূল আল্লাহর তাওহীদের (একত্ববাদের) বিষয়সমূহ থেকে যা নিয়ে এসেছেন, তা পরিত্যাগ করেছে অথবা তা বিকৃত করে ফেলেছে, তখনই আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশের জন্য, আল্লাহর তাওহীদ এবং তাঁর অনুসরণের মাধ্যমে মানুষকে সুন্দর ফিতরাতের (স্বভাবের) উপরে ফিরিয়ে আনতে অন্য একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।
এটি ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল যতক্ষণ না আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে রাসূলদের ধারাবাহিকতা সমাপ্ত করে দিয়েছেন। যিনি পূর্ণাঙ্গ দীন ও কিয়ামাত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য স্থায়ী শরী'আত ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন, যে শরী'আত পূর্বের সকল শরী'আতসমূহকে পূর্ণতা দানকারী এবং রহিতকারী। সুমহান রব আল্লাহ কিয়ামাত পর্যন্ত এ দীনের স্থায়িত্ব এবং টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন।
সকল রাসূলদের উপরে ঈমান আনা ব্যতীত কেউ মুমিন হতে পারে না
আল্লাহই সেই সত্তা যিনি রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন এবং তিনি তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে তাদের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে কেউ তাদের একজনের রিসালাতের ব্যাপারে অবিশ্বাস করলো, সে তাদের সকলকেই অবিশ্বাস করলো। মহান আল্লাহ তা'আলার অহীকে প্রত্যাখ্যান করার চেয়ে মানুষের আর কোনো বড় পাপ নেই; কেননা জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
সুতরাং এ সময়ে প্রত্যেকের জন্য আল্লাহর প্রতি এবং সমস্ত রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করা আবশ্যক। আর এটি কেবল সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর বিশ্বাস এবং অনুসরণের মাধ্যমেই হতে পারে, যিনি চিরস্থায়ী মু'জিযা কুরআন কারীমের মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা নিজে নিয়েছেন, যতদিন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে বসবাসকারী লোকজন অবশিষ্ট থাকবে।
আল্লাহ তা'আলা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন যে, যে কেউ তাঁর রাসূলদের মধ্য হতে কোন একজনকে অস্বীকার করবে, সে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী ও তাঁর অহীকে অস্বীকারকারী। মহান আল্লাহ বলেছেন:﴿إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا (١٥٠) إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا : "নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) তারতম্য করতে চায় এবং বলে, 'আমরা কতক-এর উপর ঈমান আনি এবং কতকের সাথে কুফরী করি।' আর তারা মাঝামাঝি একটা পথ অবলম্বন করতে চায়।أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا﴾ أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا : তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমি প্রস্তুত রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।"[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫০-১৫১]।
আর এ কারণেই আমরা মুসলিমরা যেভাবে আল্লাহর প্রতি, আখিরাত দিবসের প্রতি - যেভাবে আল্লাহ আদেশ করেছেন- ঈমান রাখি, সেভাবে সকল নবী ও পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের প্রতিও ঈমান রাখি। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ﴾ آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ : "এ রাসূল (মুহাম্মদ) তার রবের পক্ষ থেকে যা তার কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহ্র উপর, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলেন: আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্তাবর্তনস্থল।"[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫]।
কুরআনুল কারীম কী?
মহিমান্বিত কুরআন হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী এবং তাঁর অহী, যা তিনি সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নাযিল করেছেন। এটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশ্রেষ্ঠ অলৌকিক ঘটনা বা মু'জিযা, যা তার নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করে। কুরআনুল কারীম তার বিধানের ক্ষেত্রে হক এবং সংবাদের ব্যাপারে সত্য।আল্লাহ তা'আলা মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এর মত একটি সূরা আনতে। কিন্তু তারা তা করতে অক্ষম হয়েছিলো, এর বিষয়বস্তুর মাহাত্ম্য এবং অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের ব্যাপকতার কারণে, যা ইহকাল ও পরকালের মানব জীবনের সাথে সম্পর্কিত সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। এতে ঈমান বা বিশ্বাস-সম্পর্কিত এমন সকল তথ্য রয়েছে, যাতে ঈমান রাখা আবশ্যক।এমনিভাবে এতে এমন সব আদেশসমূহ ও নিষেধাজ্ঞাসমূহ রয়েছে যা মানুষকে তার এবং তার রবের মধ্যকার, তার এবং তার নিজের মধ্যকার অথবা তার এবং বাকি সৃষ্টির সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক বিষয়াবলির নির্দেশনা দেয়। এ সকল কিছুই বাগ্মিতা এবং স্পষ্টতার একটি উচ্চ শৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে।এতে অসংখ্য যৌক্তিক প্রমাণ এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, এই কিতাবটি মানুষের রচিত কোন কিতাব হতে পারে না; বরং এটি মানবজাতির রব মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার বাণী।
ইসলাম কী?
ইসলাম হলো তাওহীদের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর শরী'আতকে পালনীয় হিসেবে গ্রহণ করা। তাছাড়া মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদের ইবাদাত করা হয়, তাদেরকে অস্বীকার করা।
আল্লাহ তা'আলা সকল রাসূলকে একই রিসালাত সহকারে প্রেরণ করেছেন। তা হল: এক আল্লাহর ইবাদাত করা, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করা হয়, তাদেরকে অস্বীকার করা।
ইসলামই হচ্ছে সকল নবীদের দীন (ধর্ম)। সুতরাং তাদের দীন একই, তবে শরী'আত ভিন্ন ভিন্ন। মুসলিমরাই আজকের দিনে একমাত্র সঠিক ধর্মকে মেনে চলছে, যে দীন সহকারে সমস্ত নবীগণ আগমন করেছিলেন। এ যুগে ইসলামের বাণীই হচ্ছে হক। আর এটিই মানবতার প্রতি সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে চূড়ান্ত বাণী।যে রব ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা আলাইহিস সালামকে পাঠিয়েছিলেন, সে রবই সকল রাসুলদের সিলমোহর হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। আর ইসলামী শরী'আত এসেছে এর পূর্বে আগমনকারী সকল শরী'আতকে রহিতকারী হিসেবে।
ইসলাম ছাড়া আজ যে সমস্ত ধর্ম মানুষ অনুসরণ করে, সেগুলো হয় মানবসৃষ্ট ধর্ম অথবা এমন ধর্ম যা মূলত ইলাহী ধর্ম ছিল; কিন্তু তা মানুষের হাতে বিকৃত হয়েছে। আর তাতে মিশ্রিত হয়েছে রাশি রাশি কুসংস্কার, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কল্প-কাহিনী এবং মানবিক যুক্তিভিক্তিক বিষয়াদি।
মুসলিমদের ধর্ম একটি স্পষ্ট এবং অপরিবর্তনীয় ধর্ম। অনুরূপভাবে, একমাত্র আল্লাহ তা'আলার জন্য নিবেদিত তাদের ইবাদাতের কাজগুলোও অভিন্ন। সুতরাং তারা সবাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, সম্পদের যাকাত দেয় এবং রমযান মাসে সিয়াম পালন করে। তুমি তাদের সংবিধান নিয়ে চিন্তা করলে দেখবে, তাদের সংবিধান হচ্ছে: কুরআনুল কারীম। এটি পৃথিবীর সকল দেশে একই রকম। মহান আল্লাহ বলেছেন:﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ فَمَنِ ٱضۡطُرَّ فِي مَخۡمَصَةٍ غَيۡرَ مُتَجَانِفٖ لِّإِثۡمٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ﴾ ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ فَمَنِ ٱضۡطُرَّ فِي مَخۡمَصَةٍ غَيۡرَ مُتَجَانِفٖ لِّإِثۡمٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ : "আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ০৩]
কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ (٨٤) قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَالنَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ : "বলুন, 'আমরা আল্লাহতে ও আমাদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমা'ঈল, ইসহাক, ইয়া'কূব ও তাঁর বংশধরগণের প্রতি যা নাযিল হয়েছিল এবং যা মূসা, 'ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাঁদের রবের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছিল তাতে ঈমান এনেছি। আমরা তাঁদের কারও মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾ وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ : আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৪-৮৫]।
সুতরাং ইসলাম ধর্ম হলো জীবনের একটি সামগ্রিক পদ্ধতি, যা সহজাত প্রকৃতি এবং যুক্তির সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। যাকে অবিকৃত আত্মা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে থাকে। এটি মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিজগতের জন্য আইন হিসেবে প্রণয়ন করেছেন। এটি দুনিয়া ও আখিরাতে সকল মানুষের জন্য কল্যাণ ও সুখের ধর্ম। এটি একটি জাতিকে অন্য জাতি থেকে আলাদা করে না, এক রঙের লোককে অন্য রঙের লোকের উপর পার্থক্য করে না; বরং এতে মানুষ পরস্পরে সমান। ইসলামে কেউ তার ভালো কাজের পরিমাণ ব্যতীত কারো থেকে বেশী মর্যাদা পায় না।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:(مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ) مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ "মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমি তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দিবো।"[আন-নাহাল, আয়াত: ৯৭]
ইসলাম হচ্ছে সৌভাগ্যের পথ
ইসলাম হচ্ছে সমস্ত নবীগণের দীন। এটি হচ্ছে সমগ্র মানুষের জন্য আল্লাহ তা'আলার মনোনীত দীন। এটি শুধু আরবদের ধর্ম নয়।
ইসলামই হচ্ছে দুনিয়াতে প্রকৃত সৌভাগ্য এবং আখিরাতে চিরস্থায়ী নি'আমাতের পথ।
ইসলামই একমাত্র দীন (ধর্ম), যা আত্মা ও শরীরের চাহিদা পূরণ করে এবং মানবিক সকল সমস্যার সমাধান করে। মহান আল্লাহ বলেছেন:﴿قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى (123) قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى "তিনি বললেন, 'তোমরা উভয়ে একসাথে জান্নাত থেকে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসলে যে আমার প্রদর্শিত সৎপথের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না।وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى﴾ وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামাতের দিন একত্রিত করবো অন্ধ অবস্থায়।"[সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৩-১২৪]।
আমি ইসলাম গ্রহণ করলে কী উপকার পেতে পারি?
ইসলাম গ্রহণের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো:
- আল্লাহ তা'আলার বান্দা হয়ে পার্থিব জীবনে সফলতা ও সম্মান অর্জনে সফল হওয়া। অন্যথায় মানুষ শয়তান ও কামনা-বাসনার গোলাম হয়ে যায়।
- পরকালে সফলতা। আর তা এভাবে যে, আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করবেন, তার প্রতি সন্তুষ্টি হবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যেখানে সে (মানুষ) সন্তুষ্টি এবং চিরস্থায়ী নি'আমাত লাভ করবে এবং সে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।
- মুমিন ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন নবী, সত্যবাদী, শহীদ এবং নেককারদের সাথে থাকবে। এমন সাহচর্য কতই না সুন্দর! আর যারা ঈমান আনে না, তারা ত্বাগুত, দুষ্ট, অপরাধী ও বিশৃঙ্খলাকারীদের সাথে থাকবে।
- আল্লাহ যাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন তারা মৃত্যু, অসুস্থতা, বেদনা, বার্ধক্য বা চিন্তিত হওয়া ছাড়াই অনন্ত সুখে বাস করতে থাকবে। তারা যা চাইবে সে অনুযায়ী তাদের আকাঙ্ক্ষাসমূহ পূর্ণ করা হবে। আর যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তারা চিরস্থায়ী ও নিরবচ্ছিন্ন শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।
- জান্নাতে এমন আনন্দ রয়েছে, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তা কল্পনাও করতে পারে না। এর একটি প্রমাণ হল আল্লাহ তা'আলার বাণী:﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾ مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ "মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমি তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দিবো।"[আন-নাহল, আয়াত: ৯৭]।আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ﴾ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ "অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!"[সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৭]।
ইসলাম না মানলে আমার কী ক্ষতি হবে?
- (ইসলাম না মানলে) মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান ও অনুধাবন থেকে বঞ্চিত হবে, তা হল আল্লাহ সংক্রান্ত জ্ঞান ও অনুধাবন। এছাড়াও সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস হারাবে, যিনি এই দুনিয়াতে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি দান করেন এবং আখিরাতে (পরকালে) অনন্ত নি'আমাত (সুখ) দান করবেন।
- আল্লাহ মানবজাতির জন্য যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, সে ব্যাপারে জানা থেকে এবং এ মহৎ গ্রন্থের উপর বিশ্বাস করা থেকে তারা বঞ্চিত হবে।
- তারা সম্মানিত নবীদের প্রতি ঈমান আনার সুযোগ হারাবে, যেভাবে তারা কিয়ামাতের দিনেও তাদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ হারাবে। বরং এর পরিবর্তে তারা জাহান্নামের আগুনে শয়তান, অপরাধী এবং তাগুতদের সঙ্গী হবে। তাদের আবাসস্থল ও সাহচর্য কতই না নিকৃষ্ট!
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ (15) قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ "বলুন, ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতিসাধন করে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।لَهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ذَلِكَ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ يَا عِبَادِ فَاتَّقُونِ﴾ لَهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ ظُلَلٌ مِنَ النَّارِ وَمِنْ تَحْتِهِمْ ظُلَلٌ ذَلِكَ يُخَوِّفُ اللَّهُ بِهِ عِبَادَهُ يَا عِبَادِ فَاتَّقُونِ তাদের জন্য থাকবে তাদের উপরের দিকে আগুনের আচ্ছাদন এবং নিচের দিকেও আচ্ছাদন। এ দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সতর্ক করেন। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন করো।"[আয-যুমার, আয়াত: ১৫-১৬]
যে ব্যক্তি আখিরাতে নাজাত বা মুক্তি চায়, তার উপরে আবশ্যক যে, সে ইসলামে প্রবেশ করবে এবং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করবে।
নবী ও রাসূলদের (আলাইহিমুস সালাম) দ্বারা সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত একটি সত্য হল, শুধু মুসলিমরাই মুক্তি পাবে, যারা আল্লাহ তা'আলাকে বিশ্বাস করে, তাঁর সাথে ইবাদাতে কাউকে শরীক করে না এবং যারা সমস্ত নবী ও রাসূলদের উপর বিশ্বাস রাখে। প্রতিটি রসূল ও নবীর সকল মু'মিন অনুসারী যারা তাদের প্রতি সত্যায়ন করেছেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে।
সুতরাং যারা মূসার সময়ে ছিলেন এবং তার প্রতি ঈমান এনেছিলেন এবং তার শিক্ষার অনুসরণ করেছিলেন তারাই নেককার মুমিন ও মুসলিম। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা ঈসা আলাইহিস সালামকে নবী হিসেবে পাঠানোর পরে মূসার অনুসারীদেরকে অবশ্যই ঈসাকে বিশ্বাস করতে হবে এবং তাকে অনুসরণ করতে হবে।সুতরাং যারা ঈসার প্রতি ঈমান এনেছিল, তারা নেককার (ভালো) মুসলিম। আর যারা তার প্রতি ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল যে, আমরা মূসার ধর্মের অনুসারী হিসেবেই থাকব, তারা মুমিন (ঈমানদার) নয়। কারণ তারা আল্লাহ তা'আলার প্রেরিত একজন নবী প্রতি ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল।তারপরে আল্লাহ তা'আলা সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠালেন। আর সকলের উপরে তার উপরে ঈমান আনাকে ফরয করে দিলেন। যিনি মূসা ও ঈসা আলাইহিস সালামকে প্রেরণ করেছিলেন, তিনিই তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতকে অস্বীকার করবে আর বলবে যে, আমি মূসা অথবা ঈসা আলাইহিমাস সালামের অনুসারী হিসেবেই থাকবো, তবে সে মুমিন নয়।
কোনো ব্যক্তির জন্য শুধু মুসলিমদেরকে সম্মান করার দাবি যথেষ্ট নয়। তাছাড়া আখিরাতে তার নাজাতের জন্য দান-সদকা করা এবং দরিদ্রদের সাহায্য করাই যথেষ্ট নয়; বরং আল্লাহ তা'আলা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনা তার জন্য আবশ্যক। যাতে আল্লাহ তাঁর কাছ থেকে সেটি গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা'আলার সাথে শরীক করা, তাঁকে অবিশ্বাস করা, তাঁর নাযিলকৃত অহী প্রত্যাখ্যান করা বা তাঁর শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত অস্বীকার করার চেয়ে বড় কোন পাপ নেই।
সুতরাং ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তির কথা শুনে তার উপরে ঈমান আনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেছে, তারা অচিরেই জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে এবং সেখানে তারা স্থায়ীভাবে থাকবে। আর এটা আল্লাহ তা'আলার বিধান; কোন মানুষের বিধান নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ أُولَـٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّة﴾ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَالْمُشْرِكِينَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ أُولَـٰئِكَ هُمْ شَرُّ الْبَرِيَّة"নিশ্চয় কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির নিকৃষ্টতম।"[আল-বাইয়িনাহ: ০৬]
যেহেতু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য শেষ নবুয়তী বাণী অবতীর্ণ হয়েছে, তাই প্রত্যেক ব্যক্তির উপর আবশ্যক যে, সে ইসলাম এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি এর নবুয়তী বাণী শুনবে, তার প্রতি ঈমান আনবে, তার শরী'আত অনুসরণ করবে এবং তার আদেশ ও নিষেধের আনুগত্য করবে। অতএব, যে ব্যক্তি এই শেষ নবুয়তী বাণী শুনবে এবং তা প্রত্যাখ্যান করবে, মহান আল্লাহ তার কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ করবেন না এবং আখিরাতে তাকে শাস্তি দেবেন।
এ কথার দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী:﴿وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾ وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ"আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[আলে ইমরান, আয়াত : ৮৫]
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ﴾ قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ "আপনি বলুন! 'হে আহলে কিতাবগণ! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ আল্লাহ্ ছাড়া একে অন্যকে রব হিসেবে গ্রহণ না করি। ' তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তোমরা বল, তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।"[আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪]
মুসলিম হতে হলে আমাকে কি করতে হবে?
ইসলামে প্রবেশ করতে হলে এই ছয়টি রুকনের উপরে ঈমান আনা আবশ্যক:
সৃষ্টিকর্তা (الخالق ), রিযিকদাতা (الرازق), পরিচালনাকারী (المدبر) এবং মালিক (المالك) হিসাবে আল্লাহ তা'আলার প্রতি বিশ্বাস। তাঁর মত কিছুই নেই এবং তাঁর কোন স্ত্রী বা সন্তানও নেই। তিনিই একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য, এবং তাঁর সাথে কারো ইবাদাত করা যাবে না। এছাড়াও এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, তাঁকে ছাড়া অন্য যা কিছুর ইবাদাত করা করা হয়, তা বাতিল।
ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর দাস হিসাবে বিশ্বাস করা, যাদেরকে তিনি নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাদের উপর যে কাজসমূহ অর্পণ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে: তারা আল্লাহর নবীদের কাছে অহী নিয়ে অবতরণ করবে।
আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক তাঁর নবীদের প্রতি অবতীর্ণ সমস্ত কিতাব (যেমন: তাওরাত এবং ইঞ্জিল তাদের বিকৃতির আগে) এবং সর্বশেষ কিতাব আল- কুরআনুল কারীমের উপরে বিশ্বাস করা।
নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা এবং তাদের শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো সকল নবীর প্রতি বিশ্বাস করা, তারা সকলেই মানুষ ছিলেন, তাদেরকে অহী দ্বারা সাহায্য করা হয়েছিল এবং তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল এমন নিদর্শন এবং মু'জিযাসমূহ যা তাদের সত্যতা প্রমাণ করে।
আখিরাত দিবসে বিশ্বাস করা। সেটি এমন একটি সময় যখন আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে পুনরুত্থিত করবেন এবং তাঁর সৃষ্টি জগতের মধ্যে বিচার-ফয়সালা করবেন। তিনি মুমিনদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং কাফিরদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
তাকদীর এর উপরে বিশ্বাস করা। আর অতীতে যা কিছু ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে, তার সবই আল্লাহ জানেন। সেগুলো আল্লাহর জ্ঞানে ছিল এবং তিনি তা লিখে রেখেছিলেন। আর তিনি ইচ্ছা করেছেন এবং সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
তাই সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করো না!
দুনিয়া স্থায়ী আবাস নয়...
দুনিয়ার প্রতিটি সৌন্দর্য অচিরেই অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা নিভে যাবে..
এমন একটি দিন আসবে যখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এটি হচ্ছে কিয়ামাতের দিন। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلاَ كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا﴾ وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلاَ كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا "আর উপস্থাপিত করা হবে 'আমলনামা, তখন তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে দেখবেন আতঙ্কগ্রস্ত এবং তারা বলবে, 'হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে।' আর তারা যা আমল করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে; আর আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না।"[আল-কাহফ, আয়াত: ৪৯]।
আল্লাহ তা'আলা জানিয়েছেন যে, যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
সুতরাং ক্ষতিটি খুব সাধারণ নয়; বরং অত্যন্ত মারাত্মক। আল্লাহ তা'আলা বলেছন:﴿وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ﴾ وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ "আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।"[আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]
আল্লাহর কাছে ইসলামই একমাত্র গৃহীত ধর্ম। তিনি অন্য কোন ধর্মকে গ্রহণ করবেন না।
সুতরাং আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। এই পৃথিবী আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা মাত্র।
তাই মানুষের উচিত নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যে, এ দুনিয়া স্বপ্নের মতই ছোট ... আর কেউ জানে না যে, সে কখন মারা যাবে!
সুতরাং, তার সৃষ্টিকর্তার কাছে তার উত্তর কি হবে, যখন তিনি কিয়ামাতের দিন তাকে জিজ্ঞাসা করবেন: কেন সে সত্যের অনুসরণ করেনি? কেন সে শেষ নবীকে অনুসরণ করেনি?
কিয়ামতের দিন তোমার রবকে তুমি কী জবাব দিবে? তিনি যেহেতু ইসলামে অবিশ্বাসের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে কাফিরদের পরিণতি জাহান্নামে চিরস্থায়ী ধ্বংস?
আল্লাহ তা'আলা বলেন:﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ "আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।"[আল-বাকারাহ: ৩৯]।
যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে বাপ-দাদার অনুসরণ করে, সেদিন তাদের কোন ওযর থাকবে না।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের জানিয়েছেন যে, মানুষ যেখানে বসবাস করে, সেই সামাজিক পরিবেশের কারণে অধিকাংশ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে।
অনেকেই ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে; কারণ তারা তাদের বিশ্বাস পরিবর্তন করতে চায় না, যেটা তারা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অথবা তাদের পরিবেশ এবং সমাজ থেকে অর্জিত এবং তারা যেগুলোর সাথে অভ্যস্ত। তাদের মধ্যে অনেককে আবার তারা অমূলকভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে যা প্রাপ্ত হয়েছে এমন গোঁড়ামি এবং পক্ষপাতিত্ব বাধা দেয়।
আর এসব ব্যক্তিদের জন্য কোন ওযর থাকবে না। আর তারা অচিরেই কোন প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে।
সুতরাং একজন নাস্তিকের পক্ষে এটা বলাও বৈধ হবে না যে, আমি নাস্তিকই থাকব; কারণ আমি নাস্তিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি! বরং তাকে আল্লাহ যে বুদ্ধি দান করেছেন তা ব্যবহার করতে হবে, আসমান-জমিনের বিশালতা নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং তার সৃষ্টিকর্তা যে বিবেক তাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে চিন্তা করবে যে, এ মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে।অনুরূপভাবে যারা পাথর ও মূর্তি পূজা করে তাদের জন্য তাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করার কোনো বৈধ অজুহাত নেই; বরং তাদের অবশ্যই সত্যের সন্ধান করতে হবে এবং নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে: আমি কীভাবে এমন একটি জড় বস্তুর উপাসনা করতে পারি যে আমার কথা শুনতে পায় না, আমাকে দেখে না অথবা আমার কোন উপকারও করতে পারে না?!
একইভাবে, একজন খ্রিষ্টান যে এমন বিষয়গুলিতে বিশ্বাস করে যা সঠিক স্বাভাবিক স্বভাব এবং বিবেক ও যুক্তির বিরোধী, তাকেও অবশ্যই নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে: মহান রব আল্লাহর পক্ষে অন্যের পাপের জন্য তার নির্দোষ পুত্রকে হত্যা করা কীভাবে ন্যায়সংগত হতে পারে?! এটা অন্যায়! মানুষ কীভাবে প্রভুর পুত্রকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করতে পারে?! প্রভু কি তাদের পুত্রকে হত্যা করার অনুমতি না দিয়ে মানবতার পাপ ক্ষমা করতে সক্ষম নন? প্রভু কি তার পুত্রকে রক্ষা করতে সক্ষম নন?
সুতরাং পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মিথ্যার অন্ধ আনুগত্য থেকে মুক্ত হয়ে সত্যের পথে চলা একজন যুক্তিবাদী ও বিবেকবান ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُوا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ﴾ وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُوا حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ "আর যখন তাদেরকে বলা হয়, 'আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আস', তারা বলে, 'আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যার উপর পেয়েছি তাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।' যদিও তাদের পিতৃপুরুষরা কিছুই জানত না এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিল না তবুও?"[আল-মায়িদাহ: ১০৪]।
কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করতে চায়; কিন্তু তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার নিয়ে চিন্তিত থাকে, তবে তাদের কী করা উচিত?
যারা ইসলামে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক; কিন্তু তার চারপাশের পরিবেশ থেকে ভয় পায়, সে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে এবং তার ইসলামকে লুকিয়ে রাখতে পারে; যতক্ষণ না আল্লাহ তার জন্য একটি ভালো পথের ব্যবস্থা করেন, যেভাবে সে নিজে স্বাধীন হতে পারে এবং তার ইসলাম প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।
একজন মানুষের অবিলম্বে ইসলাম গ্রহণ করা আবশ্যক। তবে তার আশেপাশের লোকদেরকে তার ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়ে অবহিত করা বা তা প্রচার করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়, যখন এটি তাদের ক্ষতির কারণ হয়।
তুমি জেনে রেখো! কেউ ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে সে কোটি কোটি মুসলমানের ভাই হয়ে যায়। সে তার দেশের মসজিদ বা ইসলামিক কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও সহায়তা চাইতে পারে। তারা তার ডাকে আনন্দের সাথে সাড়া দেবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا "আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য বের হওয়ার পথ তৈরী করে দেন,وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِب﴾ وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِب আর তিনি তাকে রিযিক দেন যেখান থেকে সে ভাবতেও পারে না।"[আত-ত্বলাক: ২-৩]।
সম্মানিত পাঠক!
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সমস্ত নিয়ামত দান করেছেন, আমাদের মাতৃগর্ভে ভ্রূণ থাকাকালীন আমাদের রিজিক দিয়েছেন এবং এখন আমরা যে নিঃশ্বাস নেই তাও তিনি আমাদেরকে দান করেছেন। তাই মানুষকে খুশি করার চেয়ে তাঁকে (সৃষ্টিকর্তাকে) খুশি করা কি আমাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
ক্ষণস্থায়ী সুখ বিসর্জন দিয়ে ইহকাল তথা পরকালের সফলতা অর্জনের দুনিয়াবী সকল বস্তুর কুরবানী কি সার্থক নয়? আল্লাহর কসম, এটা অবশ্যই সার্থক!
অতএব, একজন ব্যক্তির জন্য উচিত হবে না যে, সে তার অতীতকে তার ভুল পথ সংশোধন এবং সঠিক কাজ করতে বাধা হিসেবে গ্রহণ করবে।
আজ একজন মানুষকে সত্যিকারের বিশ্বাসী হতে হবে এবং তাকে সত্য অনুসরণ করতে বাধা দিতে শয়তানকে সুযোগ দেওয়া যাবে না!
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنزلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا (174) يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمْ بُرْهَانٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَأَنزلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُبِينًا "হে মানবজাতি! তোমাদের রবের কাছ থেকে তোমাদের কাছে প্রমাণ এসেছে এবং আমরা তোমাদের প্রতি স্পষ্ট জ্যোতি নাযিল করেছি।"فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا﴾ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُسْتَقِيمًا "সুতরাং যারা আল্লাহতে ঈমান এনেছে এবং তাঁকে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করেছে তাদেরকে তিনি অবশ্যই তাঁর দয়া ও অণুগ্রহের মধ্যে দাখিল করবেন এবং তাদেরকে সরল পথে তাঁর দিকে পরিচালিত করবেন।"[আন-নিসা, আয়াত: ১৭৪-১৭৫]।
তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তুমি কি প্রস্তুত?
যা উল্লেখ করা হয়েছে তা যদি যৌক্তিক হয় এবং একজন ব্যক্তি তার অন্তরে সত্যকে চিনতে পারে, তাহলে তার উচিত মুসলিম হওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া।
কে তার জীবনের সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য চায় এবং কিভাবে একজন মুসলিম হতে হয় তার নির্দেশনা চায়?
তার পাপ যেন ইসলামে প্রবেশে তাকে বাধা না দেয়। আল্লাহ কুরআনে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যদি কোন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার কাছে তওবা করে, তবে তিনি সে মানুষের সমস্ত পাপ ক্ষমা করবেন। আর এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে, ইসলাম গ্রহণের পরও একজন ব্যক্তির কিছু পাপ করা স্বাভাবিক। কারণ আমরা মানুষ। আমরা গুনাহমুক্ত (মা'ছুম) ফিরিশতা নই।কিন্তু আমাদের কাছে চাওয়া হলো, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবো এবং তাঁর কাছে তওবা করবো। আল্লাহ যদি দেখেন যে, আমরা সত্য গ্রহণে ত্বরান্বিত হয়েছি, ইসলামে প্রবেশ করেছি এবং ঈমানের দুটি সাক্ষ্য স্বীকার করেছি, তবে তিনি আমাদের অন্যান্য পাপ পরিহার করতে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে অগ্রসর হবে এবং সত্যের অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাকে আরও ভালো কাজের তাওফীক দিয়ে দিবেন। অতএব, একজন ব্যক্তির অবিলম্বেই ইসলামে প্রবেশ করা উচিত, এ ব্যাপারে দ্বিধা-সংকোচ করা উচিত নয়।
এ কথার দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা'আলার বাণী:﴿قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ﴾ قُلْ لِلَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ"যারা কুফুরী করেছে, তাদেরকে আপনি বলুন, যদি তারা বিরত হয়, তাহলে পূর্বে যা হয়েছে সে ব্যাপারে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে।"[সূরা আনফাল : ৩৮]।
একজন মুসলিম হতে হলে আমাকে কী করতে হবে?
ইসলাম গ্রহণ করার কাজটি খুবই সহজ এবং এতে কোনো সাধনা, আনুষ্ঠানিকতা অথবা কারো উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। কোন ব্যক্তি অর্থ জেনে এবং বিশ্বাসের সাথে শুধু এ দুটি সাক্ষ্য উচ্চারণ করে বলবে: (أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمدًا رسول الله)"আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল।" যদি তুমি এগুলো আরবীতে বলতে পারো, তবে ভালো। অন্যথায় যদি তোমার জন্য কষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তোমার নিজের ভাষাতে বলাই যথেষ্ট হবে। আর এটুকুর মাধ্যমেই তুমি একজন মুসলিম হয়ে যাবে। তারপরে তোমার উপরে আবশ্যক হবে তোমার দীন (ধর্ম) শিখে নেওয়া, যা অচিরেই দুনিয়াতে তোমার সৌভাগ্য এবং আখিরাতে তোমার নাজাতের উৎস হবে।
কে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন? আমাকে কে সৃষ্টি করেছেন? এবং কেন?
এই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা রবই হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা।
মহান সৃষ্টিকর্তা রবের সিফাতসমূহ
মা'বূদ (ইবাদাতের উপযুক্ত) রবকে অবশ্যই পূর্ণতার সকল গুণে গুণান্বিত হতে হয়
কেন এই মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন? এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে কি চান?
সকল রাসূলদের উপরে ঈমান আনা ব্যতীত কেউ মুমিন হতে পারে না
আমি ইসলাম গ্রহণ করলে কী উপকার পেতে পারি?
ইসলাম না মানলে আমার কী ক্ষতি হবে?
মুসলিম হতে হলে আমাকে কি করতে হবে?
তাই সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করো না!
যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে বাপ-দাদার অনুসরণ করে, সেদিন তাদের কোন ওযর থাকবে না।
তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তুমি কি প্রস্তুত?
একজন মুসলিম হতে হলে আমাকে কী করতে হবে?